ঔষধ হবে নিরাপদ!!!

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী
  • তারিখঃ 2017-04-17
  • ভিজিটঃ 2278
 

নিয়ম-নীতি শৃংখলার বালাই বলতে কিছুই যেন আর অবশিষ্ট নেই আমাদের এই সমাজে। যে যে যেভাবে পারছে সে সেভাবেই জনসাধারণকে প্রতারিত করে দেদারসে পয়সা কামাচ্ছে। আর এই পয়সা উপার্জনের বিষয়টিই যেখানে একমাত্র আরাধ্য সেখানে কোন প্রকার দায়-দায়িত্ববোধ আশা করাটাও তো বাতুলতা। ঔষধ মানব জীবনের একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। একদিকে যেমন নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ক্রয় করে ক্রেতাদেরকে অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। ফলে ঔষধ বিষয়ে জন সচেতনতা তৈরি ও মানুষের কাছে নিরাপদ করার জন্য নিয়মিত বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। এরই অংশ হিসেবে গত 08-10-2016 তারিখ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলাধীন দশানী নামক স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। এ সময় জননী ফার্মেসি ও সেবা ফার্মেসি নামক দুইটি ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমে জননী ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। যত্রতত্র ঔষধ রাখা। অনেক ঔষধের উপর ময়লার আস্তরণ পড়ে আছে। এ সময় দোকানের ঔষধ পরীক্ষা করা হয় এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। এরপর সেবা ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবাক ব্যাপার এ ফার্মেসিরও ব্যবসায় পরিচালনার লাইসেন্স নবায়ন নেই। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক একজন মহিলা এবং তাঁর স্বামী এ ফার্মেসিতেই বসেন যিনি একজন ডাক্তার। এ ফার্মেসির ফ্রিজ খুলে দেখা যায় মাংস ও ঔষধ পাশাপাশি রাখা। ফার্মেসির মালিককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান যে, ফ্রিজে কুরবানি ঈদের মাংস রাখা আছে। দোকানে ঔষধ পরীক্ষা করা হয়। এ সময় দেখা যায় যে অনেক ঔষধের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। পরবর্তিতে মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে ডাকা হয় এবং তাদের কাছে সামগ্রিক বিষয় উপস্থাপন করা হয়। তারা ফার্মেসির অবস্থা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের পরিমাণ দেখে হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। পূর্বে এ সকল ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি তাই তারা সচেতন নন এবং সংশোধনের সুযোগ পায়নি বলে জানান। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দুইটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসায় পরিচালনার লাইসেন্স নবায়ন করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ও সাধারণ লোকজন ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রশংসা করেন এবং এ ধারা নিয়মিত অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন। নকিব রেজাউল কবির (৪৫) সত্ত্বাধিকারী জননী ফার্মেসি এবং সাবেরা খানম (৪৫) সত্ত্বাধিকারী সেবা ফার্মেসিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয় করার উদ্দেশে নিজ দখলে রেখে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫১ ধারার লঙ্ঘন ও ৫১ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেকে ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার টাকা) করে মোট ১০,০০০/- (দশ হাজার টাকা) জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেকে 07 দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড  প্রদান করা হয়। তারা উভয়ই দোষ স্বীকার করে অনুতপ্ত হন এবং জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। তারা ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন এবং অন্যান্য ফার্মেসিকেও এ বিষয়ে সচেতন করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান থাকবে। জাগ্রত হবে সমাজের বিবেক। সাধারণ মানুষের জন্য ঔষধ আর আতংকের বিষয় হবে না; ঔষধ হবে নিরাপদ।


 প্রিন্ট