মোবাইল কোর্টের নীরব বিপ্লব...

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  রোমেন শর্মা
  • তারিখঃ 2018-10-24
  • ভিজিটঃ 1172
 
আজকের দিনটা অন্য দশটা দিনের মতো হতে পারতো। মোবাইল কোর্টে বের হলেই কোন না কোন অসঙ্গতি পাওয়া একেবারেই সাধারণ ঘটনা। অসঙ্গতি না পাওয়াটাই বিস্ময়ের। বিএসটিআই এর পরিদর্শক বললেন, ফিলিং স্টেশন গুলোতে পরিমাপে কম দেওয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতি ৫ লিটারে ৫০০ মি.লি. পর্যন্ত কম দেওয়া হয়। আমি ভাবলাম, সিরিয়াস ইস্যু। একটা ড্রাইভ তো দিতেই হয়। ফোর্স নিয়ে বের হলাম। একে একে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়, শিকারীকান্দা, চুরখাইসহ যেখানে যেখানে ফিলিং স্টেশন আছে প্রায় প্রতিটা জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হল। বিএসটিআই এর ৫ লিটারের একটা স্ট্যান্ডার্ড জার আছে। ফুয়েল ডিসপেনসার থেকে ৫ লিটার ফুয়েল সেটাতে ঢালতে বলা হলো। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছে ৫.০০ লিটার। এনালগ জারে ঠিক যেখানে ০.০০ লেখা আছে তেলের লেভেল ঠিক সেখানে এসে ঠেকছে। বিএসটিআই এর পরিদর্শকের চেহেরার লেভেল অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে। ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজারকে হাসিমুখে ধন্যবাদ দিয়ে, এক ফিলিং স্টেশন থেকে আরেক ফিলিং স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোন ক্লান্তি লাগছে না। অদ্ভূত এক প্রশান্তি ভর করছে মনজুড়ে। এক জায়গায় গিয়ে দেখা গেল ০.২ মি.লি. বেশী হয়ে গেছে। ম্যানেজারের মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেল। পরিদর্শকের চেহেরা চক চক করছে। অপরাধ পাওয়া গেছে। দি স্ট্যান্ডার্ডস অব ওয়েটস এন্ড মেজার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ এর ২৮ ধারা অনুসারে পরিমাপে বেশী দেয়া এবং কম দেয়া দুটোই অপরাধ। বাকি ডিসপেনসারগুলো চেক করা হলো। আর কোনটাতেই প্রব্লেম নাই। ম্যানেজার নিজ থেকেই বলল, "স্যার, এই মেশিনে একটু সমস্যা আছে। কালকেই মেকানিক এনে ঠিক করে ফেলবো।" ম্যানেজারকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে গেলাম। পথে পেশকারকে বললাম, বেশী দেওয়াটাও যে অপরাধ - ওরাতো দেখি সেটা জানে। অভিজ্ঞ পেশকার। তিনি বললেন, ময়মনসিংহে যে কটা ফিলিং স্টেশন আছে এর প্রায় প্রতিটাতে এর আগে মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে। তাই সবাই ঠিক হয়ে গেছে। কেমন জানি গর্ববোধ হতে লাগল। ক্রেডিট তো আমার না। ক্রেডিট আমার পূর্বসূরী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের, যাদের অক্লান্ত শ্রমে অন্তত এই সেক্টরটাকে ঠিক করা গেছে। মন থেকেই অস্পুষ্টভাবে বের হয়ে আসল, "ধন্যবাদ স্যার"। মোবাইল কোর্টের গাড়ি বাতাস কেটে চলছে ঢাকা-ময়মনসিংহের চার লেইনের মহাসড়কে। শীতের বার্তা নিয়ে ঠান্ডা হাওয়া পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীরজুড়ে, সাথে সমস্ত মন। ভালোলাগার অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে, গাঢ় থেকে গাঢ়। এই অনুভূতি যে বহুদিনের অচেনা।

 প্রিন্ট