যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  সুজন সরকার
  • তারিখঃ 2017-04-18
  • ভিজিটঃ 1849
 
একবিংশ শতাব্দীতে আজও যখন দেখি শিশুর কোলে শিশু লালিত পালিত হচ্ছে, তখন আমার বোধ কাজ করে না। বেশ ভাল ভাবেই জানি, ঘৃণা করাই সমাধান নয়; প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলনের। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলে সমাজের মানুষের নানান কথা শুনতে হয়না, কিছুটা দায়মুক্তি ঘটে -এই রকম ধারণা অনেকেই করেন। সমাজটা কাদের নিয়ে? সামাজিক পরিবর্তন কার হাত ধরে আসে? নিশ্চয় মানুষের হাত ধরে, অন্য কোন প্রাণীর হাত ধরে নয়। তাহলে সমাজের কথা বলে নিজের শিশু মেয়েকে মৃত্যুপথে কেন ঠেলে দিই আমরা? আসল ঘটনায় আসা যাক।  ১৮ মার্চ, ২০১৬। কেবল সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের প্রথম প্রহর। অন্য আরও দশটা দিনের মত আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরে টিভির নিউজ স্ক্রলে চোখ বুলাচ্ছি। এসময় একটি অপরিচিত নম্বর হতে ফোন কল আসলো। আমি একটু বিরক্তি নিয়ে হ্যালো বলতেই ইথারের মাধ্যমে ওপাশ থেকে ভীত-সন্ত্রস্থ একটি মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম- -         স্যার, আমি সুহা, সুহাসিনী (ছদ্মনাম)। আমি পড়তে চাই। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। আমি কিছু জানতে চাওয়ার আগেই ফোনের কলটি কেটে গেল। কি করবো, ভাবছি; এমন সময় একটি ক্ষুদেবার্তা এলো আমার মোবাইলে। সেখানে একটি ঠিকানা লেখা। কি করবো বুঝে উঠতে না পারায়, আমি এডিএম স্যারকে ফোন দিলাম এবং ঘটনার আদ্যপান্ত বললাম। এডিএম স্যার আমার কাছ থেকে ঠিকানাটি নিলেন। স্যার ঠিকানায় উল্লেখিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে খোঁজ নিলেন এবং একটি বাল্যবিবাহ হতে যাচ্ছে মর্মে জানতে পারলেন। এরপর, প্রাপ্ত তথ্যমতে স্যার আমাকে বাল্যবিবাহ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দিলেন। রাত ৯.০০ টা। আমি, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ফোর্স নিয়ে ঐ ঠিকানায় পৌঁছালাম। সেখানে পৌঁছে কনের সাজে যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম, সে যে সুহাসিনী, তা অনুমান করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা হলনা। আমি একটি আতঙ্কিত মেয়ের চোখে-মুখে স্বস্তির সুবাতাস লক্ষ্য করলাম। কিন্তু, আমার বিস্ময় রয়ে যায়, যে বয়সে একটি মেয়েশিশুর হাতে বই শোভা পায়, সে বয়সে শত অনিশ্চয়তাকে মেনে নিয়ে ঐ মেয়েশিশুর হাত কিভাবে বিয়ের মেহেদী রংঙে লাল হয়! আমাদের সম্ভাব্য উপস্থিতি টের পেয়ে বরপক্ষ পালিয়েছিল, তবে সুহা’র বাবা-মাকে খুঁজে পাই। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে আমি সুহা’র বাবা-মাকে বাল্যবিবাহের ভয়বহ পরিণতির কথা বলি এবং তারা তাদের ভুল বুঝতে পারেন।  বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ অনুসারে সুহা’র বাবাকে ১০০০.০০ (এক হাজার টাকা) জরিমানা করি এবং তার নিকট হতে মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিবেন না মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করি। আজ স্বপ্ন দেখি সেই রেঁনেসা’র, যেখানে সুহার মত ছাত্রীরাই নেতৃত্ব দিবে, বিশ্বাস করবে- ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে…’।

 প্রিন্ট