মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মোঃ আবুল হাসেম
  • তারিখঃ 2017-04-21
  • ভিজিটঃ 4807
 
সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান একটি নিয়মিত ঘটনা।প্রতিবেশি দেশ থেকে প্রতিদিনই অসাধু ব্যবসায়ী এবং চোরাকারবারিদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা, ভারতীয় মদ, ফেন্সিডিল, জিরা, মটরসাইকেল, কিসমিস ও মসলাজাতীয় পণ্য এদেশের বাজারে প্রবেশ করে।কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে এদেশের বাজারে প্রবেশ করে যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরুপ।বিশ্বায়নের এই যুগে মার্কেট অর্থনীতিতে এই সব অনৈতিক কর্মকান্ড বিরুপ প্রভাব ফেলে, যা আমাদের দেশীয় পণ্যের বিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। ইয়াবা ও ফেন্সিডিল এদেশের যুব সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিজিবি সদস্যদের নজর এড়িয়ে অথবা যোগসাজসে এসব পণ্য প্রবেশ করে। আমার কর্মক্ষেত্র সীমান্ত এলাকাবর্তী একটি জেলা যা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিচিত। ট্রেনের মাধ্যমে ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসব পণ্য প্রতিদিন আসে। প্রতিদিন বাজারে গেলে বোরকাপড়া মহিলাদের এই পণ্য দোকানে সাপ্লাই দিতে দেখা যায়।প্রায়শই এই ধরণের চিত্র গোপনে দেখতাম। একদিন টাস্কফোর্সের (বিজিবি ও পুলিশ) সদস্যদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিহারীপট্টিতে অভিযানে যাই।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় একটি বাড়িতে প্রচুর পরিমানে অবৈধ মালামাল রয়েছে। আমি, পেশকারসহ টাস্কফোর্সের সদস্যদের নিয়ে ঐ বাড়িতে প্রবেশ করি। মহিলাদের নিরাপদ একটি কক্ষে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ করি। তারপর তাদের পুরুষ সদস্যদের সহযোগীতায় 'সার্চ' করতে গিয়ে আমরা হতবাক হই। বাসার প্রতিটি রুমে ভারতীয় শাড়ী, মদের বোতল, জিরা ও মসলার পাহাড়। তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বললে তারা তা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়। অত:পর জব্দ করতে নির্দেশ দেই।কিন্তু বাসার মহিলারা চেঁচামেচি শুরু করে দেন। অনেকেই কান্না শুরু দেন,আবার কেউ কেউ তেড়ে আসছেন। আমি ডিএম ও এডিএম স্যারকে বিষয়গুলো অবহিত করি।স্যারের নির্দেশে মালামাল বের করা শুরু করলাম। বাসার খাটের নিচে, ফ্রিজে, চটের বস্তা, পুরাতন কলসি, সিলিং ও বাথরুমের উপড়ের খালি জায়গা খুঁজে প্রায় ২৫ বস্তা শাড়ী জিরা ও মসলা এবং চোলাই মদ ও গাঁজা উদ্ধার করে বাসার সামনে জড়ো করছি। এমন সময়ে খবর আসে আমাদের এক (পিয়ন)/অফিস সহকারী যে ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলো, তাকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, আমরা যে বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করি তারা ছিলো তিন ভাই, একই বাড়িতে থাকে এবং একই মার্কেটে ব্যবসা করে থাকে। যাইহোক, অপহরণের খবর পেয়ে অনেকটা স্তম্ভিত হয়ে যাই। জেলা ম্যাজিস্টেটের নির্দেশে পুলিশের আরেকটি টিম ও গোয়েন্দাদলকে পাঠানোর জন্য এসপি মহোদয়কে অনুরোধ করি। তারপর আমরা যৌথ অভিযানে নেমে পড়ি। এরই মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়েছে। সম্ভাব্য একটি নির্মাণাধীন পৌর মার্কেটের দোতলায় গিয়ে দেখি পানি এবং রক্তের দাগ, ভয় পেয়ে যাই! তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকি।আবার ঐ বাড়িতে ফিরে যাই, একজন মহিলাকে বললাম ফোনের মাধ্যমে সংবাদ দিতে যেনো পিয়নকে ফেরত পাঠায়। মহিলা জানালেন, তার স্বামী বলছে, মালামাল সব ফেরত দিতে- অন্যথা! আমি এবার কৌশল অবলম্বন করলাম।তাদের স্বপক্ষে অবস্থান নিলাম। তারা আশ্বস্ত হলেন। আমরা কৌশলগত অবস্থান নিলাম, তার মাধ্যমে আধা কিমি দুরের একটি ( মার্কেট পাশে) বাড়িতে পুলিশ, বিজিবিসহ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করি।অত:পর দীর্ঘ তিনঘন্টা পর সহকারীকে ফেরত পাই। তারপর জব্দকৃত মালামাল কাস্টমসে জমা দেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিজিবিকে নির্দেশ দেই এবং অপরাধীকে মোবাইল কোর্ট আইনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৯০ অনুসারে দুই বছর জেল ও জরিমানা করা হয়। ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। ভারতীয় অবৈধ মালামাল দেশে প্রবেশরোধে আরো কঠোর হওয়া উচিত।

 প্রিন্ট