ইলিশ রক্ষা অভিযান

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মো: সৈকত ইসলাম
  • তারিখঃ 2017-04-18
  • ভিজিটঃ 2341
 
বিগত দশকে অবাধে জাটকা নিধন এবং প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ আহরণের ফলে  গ্রামাঞ্চলের বহুল প্রচলিত প্রবাদ “মাছের রাজা ইলিশ” প্রাপ্যতা এবং মূল্য উভয় দিক থেকেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। পরবর্তীতে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে ০১ মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল; মোট দুই মাস ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন বন্ধের সরকারি নির্দেশ জারী করা হয়। কারণ জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত জাটকা ধরার মৌসুম হলেও মার্চ এবং এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ ভাগ জাটকা ধরা পড়ে। সরকারি এই আদেশের ব্যাপক প্রয়োগ করার মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে ইলিশ মাছের ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে তা আবারো সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। কয়েক বছর ধরেই দেশে ইলিশের উৎপাদন  তিন থেকে চার লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে ওঠানামা করছে। এই অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোবাইল কোর্ট তথা ভ্রাম্যমান আদালত। এই আদালত পরিচালনার মাধ্যমে “মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০” এর ০৫ ধারায় উল্লিখিত সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষিত সময়ে একটি নির্দিষ্ট আকারের চেয়ে ছোট মাছ বিক্রয় বা বিনিময়ের জন্য শিকার, বহন, পরিবহন, প্রদর্শন বা দখল  করার জন্য সর্বোচ্চ ০২ বছর কারাদন্ড (তবে ০১ বছরের কম নয়) এবং ৫০০০টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড প্রদান করা হয়। গত ২০১৬ সালে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে দেশের ৩২০ কিলোমিটার এলাকায় ০৫টি অভয়াশ্রমে  ০১ মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। আমি তখন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাদঁপুরে কর্মরত। ইলিশের জন্য সুবিখ্যাত এ জেলার মতলব উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়ন পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা এলাকাটিও একটি অভয়াশ্রমের  অন্তর্ভূক্ত ছিলো। এলাকাটি দরিদ্র মৎসজীবীদের এলাকা এবং এখানে মোট তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছেন ৪১ হাজার। তাদের সহযোগিতার জন্য ৪০ কেজি চাল বিতরণসহ সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা উক্ত নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে যেতেন। জেলা প্রশাসনের কঠোর তদারকি এবং নিরবচ্ছিন্ন পাহারায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ সদা তৎপর ছিলাম। ১২ই এপ্রিল, ২০১৬ আমার নেতৃত্বে এরকম একটি অভিযান মেঘনা নদীতে পরিচালনা করা হয়। নিয়মিত অভিযানের বাইরে এ অভিযান ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম সামনে পহেলা বৈশাখ থাকায় জেলের কিছুটা বেপরোয়া হয়ে মাছ ধরছিল তার এই জন্য খুব ভোরে তাদের জাল পেতে রাখত এবং সুযোগমত বিভিন্ন সময়ে এসে সেই সমস্ত জাল তুলে নিয়ে যেত। এই কারণে ঐদিন ভোর ০৪টা থেকে আমরা অভিযান শুরু করি। আমাদের অভিযান চলেছে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। এটি  ছিলো ঐ মৌসুমে পরিচালিত জাটকা ইলিশ রক্ষায় অন্যতম বড় অভিযান।   ঐ দিনের অভিযানে জাটকা  ইলিশ ধরার অপরাধে ৪৭ জন জেলেকে ১ বছরের জন্য জেল প্রদান করি। এছাড়া ১২ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক জেলেকে বাবা মায়ের  কাছে মুচলেকা নেওয়া হয়। ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কেননা এর পড়ে কয়েক দিন অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি নদী প্রায় শূন্য ছিল এবং জেলে পল্লীতে এই মেসেজটা গিয়েছিল যে প্রশাসন “যেমন আমাদেরকে চাল দিয়ে  আমাদের পাশে থেকেছে তেমনি নিয়ম না মানলে প্রশাসন  কঠোরতা দেখাতেও কোন কমতি করবে না”। সবশেষে বলতে চাই ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং জাতীয় সম্পদ। বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। এই মাছে ভিটামিন এ, জিংক ও ওমেগা-৩ নামের খাদ্যগুণ আছে, যা বিশ্বের বেশির ভাগ মাছে নেই। বাংলাদেশের ২০ লাখ মানুষের জীবিকার উৎস ইলিশ। জাটকা ও মা মাছ ধরা বন্ধ করলে বাংলাদেশে ইলিশের সংস্থান বাড়বে। এতে এই ২০ লাখ মানুষের আয় বাড়বে। এই সুবিশাল কর্মকান্ডে মোবাইল কোর্ট তাই রাখছে উল্লেখযোগ্য অবদান।  

 প্রিন্ট