পানির অপর নাম কি আসলেই জীবন???

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  আতাউল গনি ওসমানী
  • তারিখঃ 2017-04-18
  • ভিজিটঃ 1338
 
সিলেট জেলায় বসবাসকারি সকলেই জানেন যে সিলেটের প্রায় সকল স্থানের পানিতেই আয়রন বেশি। আয়রন বেশি বলতে কতটা বেশি? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি আপনার সাদা শার্ট ওই পানি দিয়ে ধুয়েই ফেলেন তবে ঐ শার্ট দেখে কেউ আর যাই বলুক সাদা বলবেনা! সেজন্য খাবার পানির জন্য আপনাকে নির্ভর করতে হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে সাপ্লাইকৃত পানির উপর কিন্তু ঔ পানিও প্রায়শই ঘোলা থাকে। এসব পানি ফুটিয়েও পান করা যায়না। খাবার পানির জন্য সাধারণ ও অসাধারণ (দরিদ্র ও ধনী বোঝাতে) সকলকেই তাই বোতলজাত বা কন্টেনারজাত পানির উপরই নির্ভর করতে হয়। বোতলজাত বা কন্টেনারজাত পানির ব্যবসা সিলেটে রমরমাই বলা চলে। গত বছরের (২০১৬) সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ হালদার পাড়া, আম্বরখানা কুশিয়ারা আবাসিক এলাকা, সিলেটে অবস্থিত কন্টেনারজাত পানি বিক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠান দেখতে যাই। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার স্থানের নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। যাহোক, পানি শোধনাগারে যাওয়ার পূর্বেই বয়স্ক একজন লোককে দেখতে পেলাম যার সাদা চুল আর আতশিকাঁচের মত চশমা দেখে মনে হয় বয়স কমপক্ষে ৭০ বছর হবে। তার পরিচয় জানতে চাইলে বললেন তিনি ওই শোধনাগারের ক্যামিস্ট! আরেকটু এগুতেই শোধনাগারের মালিক জনাব বেনু ভূষণ দাশ, পিতা: মৃত ব্রজেশ নন্দ দাশ-কে পেলাম। বিএসটিআই এর ফিল্ড অফিসার (সিএম) জনাব মোঃ রকিবুল হাসান রিপন, ক্যামিস্ট ও শোধনাগারের মালিককে সাথে নিয়ে শোধনাগারের ভিতরে ঢুকে পানি শোধন প্রণালি প্রথমবারের মত সরাসরি দেখার সুযোগ পেলাম। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা হিসেবে খুব একটি সুখকর ছিলনা। খুব ছোট এরিয়া নিয়ে শোধনাগারটি অবস্থিত। ফিল্ড অফিসার (সিএম) জনাব রিপন জানালেন জনাব বেনু ভূষণ দাশ লাইসেন্স গ্রহণের জন্য বিএসটিআই এ পানি সরবরাহ করলে তা ল্যাব টেস্টে পাশ করেনি। এরপর নিয়ম হচ্ছে বিএসটিআই যে বিষয়ে আপত্তি দিবে সে বিষয়টি পরিবর্তন করে পুণরায় ল্যাব টেস্টের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে অনুমোদন না নিয়েই দিব্যি পানি বিক্রয়/বিতরণ করছেন। শোধনাগারের শ্রমিকগণ পানির জারে যেভাবে পানি ভরছিলেন তা দেখে খুব সাধারণভাবেই মনে হয়েছে তা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। শ্রমিকদের যেভাবে চুল, হাত, পা ঢেকে পানি বোতলজাত করার কথা সেভাবে করেননা। তখন চিন্তা করলাম, আম্বরখানার খুব কাছেই আছে হযরত শাহ জালার (র.)-এর মাজার। এখানে প্রতিদিন শতশত ভক্ত ও দর্শনার্থি ভিড় করেন। তাদের মধ্যে যদি শতকরা একজনও যদি এই পানি পান করে অসুস্থ্য হয় তবে তা সকল টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। পানি শোধনাগারের মালিক জনাব বেনু ভূষণ দাশকে ডেকে সবকিছু বুঝিয়ে জানতে চাইলাম তিনি কী চান? তিনি বলেন বিষয়টি এত গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেননি। তিনি আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিলেন ল্যাব টেস্টে পাশ নাকরা পর্যন্ত আর শোধনাগার চালু করবেন না। যেহেতু তিনি অবৈধভাবে এতদিন চালু রেখেছিলেন তাই বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড ও টেস্টিং ইনস্টিটিউশন অধ্যাদেশ-১৯৮৫-এর ৩১(ক) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫০,০০০.০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা করি। জনাব বেনু ভূষণ দাশ সাথে সাথে জরিমানার টাকা পরিশোধ করলেন এবং আমাদের জানালেন খুব শিঘ্রই পানি শোধনাগারটি আবাসিক এলাকা হতে স্থানান্তরিত করবেন। পানি শোধনের আধুনিক যন্ত্রাংশ স্থাপন করবেন। ক্যামিস্টসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিবেন। তিনি আর কখনই দূষিত পানি বিক্রয় করে কারো জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিবেন না।

 প্রিন্ট