চালের কলে পাটের থলে

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  লুৎফুন নাহার
  • তারিখঃ 2017-04-19
  • ভিজিটঃ 1461
 
প্রত্যেকটি দিন কখনো একরকম হয়না। নতুন নতুন সময়ে নতুন নতুন বিষয় আলোচনায় আসে। আর প্রশাসনও সে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে ব্যস্ত হয়ে পরে। এমনই এক সময় ২০১৫ সাল যখন স্লোগান ছিল ‘বাংলার পাট/ বিশ্বমাত। সরকার তার সোনালী আঁশ পাটের গৌরব পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-র ঐকান্তিক আগ্রহ ও দিক নির্দেশনায় পাট খাতের উন্নয়নে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ এবং ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ প্রয়োগের ফলে পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহারে প্রায় ১০০% সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি বছর ৬ মার্চ-কে জাতীয় পাট দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ সময়ে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি এ ছয়টি পণ্যের ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ/বস্তা বাধ্যতামূলক করা হয়। নড়াইলের মতো ছোট জেলাও পাট খাতের উন্নয়নে কম ভূমিকা রাখেনি। জেলা প্রশাসক, নড়াইল মো: হেলাল মাহমুদ শরীফ-এর নির্দেশনায় ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’-এর অধীনে ব্যাপক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে এসময়। সেদিন ছিল ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ রোজ সোমবার। প্রস্তুত হয়ে জেলার মূখ্য পাট পরিদর্শককে নিয়ে রওনা করি মোবাইল কোর্টে। একসময় আমরা পৌঁছলাম রামচন্দ্রপুর বাজারে। সেখানে কয়েকটি চালের কলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বেলা ০১.৩০ ঘটিকায় পৌঁছাই মো: ইমতাসির মোল্যার চালের কলে। সেখানে গিয়ে বেশকিছু প্লাস্টিকের বস্তা পাই। তখন তার অপরাধ আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করি এবং তাকে তা পাঠ করে শুনাই। তিনি তার অপরাধ স্বীকার করায় উপস্থিত দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষরসহ ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’-এর ১৪ ধারায় মো: ইমতাসির মোল্যা (বয়স-৩৫), পিতা মো: মাহতাব মোল্যা, গ্রাম: রামচন্দ্রপুর, নড়াইল সদর, নড়াইল-কে ৫০০/= জরিমানা করা হয় এবং যথারীতি জরিমানার টাকা আদায় করা হয়। সেসময়ে তাকেসহ উপস্থিত অন্যান্য চালকল মালিকদের পাটপণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়। তাতে তারা পাটপণ্য ব্যবহারে বেশ উদ্বুদ্ধ হয়। তখন বেশ কিছু লোক ভিড় করে সেখানে । সবার সামনে শাস্তি পাওয়ায় মো: ইমতাসির মোল্যা বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করেন। তিনি আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেন তিন ঘণ্টার মধ্যে সব প্লাস্টিকের ব্যাগ সরিয়ে পাটের ব্যাগে ধান, চাল রাখবেন। এমনকি তার চালের কলে যারা প্লাস্টিকের ব্যাগে ধান ভাঙাতে দিয়েছিলেন তাদের সব ধান তিনি ফিরিয়ে দেন এবং পাটের ব্যাগে নিয়ে আসতে বলেন। অবশ্য তিনি অভিযোগ করেন, বাজারে যে পাটের বস্তা কিনতে পাওয়া যায় তা মানসম্মত নয়। দুই-তিনবার ব্যবহারে তা নষ্ট হয়ে যায়। তবে তার কার্যক্রমে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলার সাধারণ মানুষ সহজেই যে কোন আইন মান্য করে চলে। --------------

 প্রিন্ট