অপারেশন থিয়েটার নাকি কসাইখানা!
- গল্প লিখেছেনঃ মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী
- তারিখঃ 2017-05-09
- ভিজিটঃ 6207
আকস্মিক অভিযানে হতবিহ্বল মালিক অপু প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ হালনাগাদ লাইসেন্স নিয়ে আসার কথা বলে ভ্রাম্যমান আদালতকে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম হতে থামিয়ে রাখে। হালনাগাদ লাইসেন্স, ডাক্তার, বিধি মোতাবেক নার্স, যন্ত্রপাতি, রোগীদের তালিকা কিছুই নেই। অপারেশন থিয়েটারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, রোগীর ওয়ার্ডগুলো যেন একেকটা রান্নাঘর। এভাবেই চলছিল 'ন্যাশনাল প্রাইভেট হাসপাতাল' নামক প্রতিষ্ঠানটি। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বার বাজার এলাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালের মালিক অপু বলল, "স্যার, সবই জানি, ভুল হয়ে গেছে।" ৩০ এপ্রিল, ২০১৭ খ্রি: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ডাক্তার আরিফ আহমেদ কে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের এ অভিযান পরিচালনা করি। এরকম দৈন্যদশা দেখে মনে মনে ঠিক করি হাসপাতালটি পুরোই সিলগালা করে ব্যাটাকে কারাদন্ডাদেশ দিবো আজ। কিন্তু দেখলাম যে সকল রোগী বর্তমানে এ হাসপাতালে অবস্থান করছে তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য আশেপাশে কোন হাসপাতাল নেই। উপজেলা হাসপাতাল প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা এখান থেকে। নেই সুবিধাজনক গাড়িও। তাছাড়া আমার আদালতের লোকজন রাস্তায় গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের মুখের কথা শুনে আসল। এলাকার মানুষ বলাবলি করছে যে এ হাসপাতালের মালিক অপু'র বাবা আজ হার্ট অ্যাটাকে মারাই যাবে যদি শুনে তার ছেলের জেল হয়েছে। ছেলের কারণে নাকি একবার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছে বাবার। সিদ্ধান্ত নিলাম শুধুমাত্র অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করবো এবং হাসপাতালের মালিককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৫৩ ধারা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করবো। জরিমানাটা এমন অঙ্কে করেছি যাতে মালিকের দিতে কষ্ট হয়। নিজের পকেট থেকে জরিমানার টাকা দিয়ে দিতে পারলে মোটেও শিক্ষা হয় না। একটা বড় অঙ্ক ঋণ করে দিলেই বরং শিক্ষা হয় অসাধু এসব ব্যবসায়ীর। এছাড়া বর্তমানে অবস্থান করা রোগীদের রিলিজ দেয়ার পর হাসপাতালটি বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আসলাম। কিছুদিন পর ফলো আপ চলবে।